নামধারী না প্রকৃত মুসলিম???
~ আচ্ছা কেও যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে মুসলিম হওয়ার প্রথম শর্ত কি? আপনি কি বলবেন তার উত্তরে? আমার জানামতে এটাই যে তাকে প্রথমে ঈমান আনতে হবে। ঈমান কি? ঈমান হলো আল্লাহ্, তার রাসূল ও তার যাবতীয় সকল কিছুর উপর নির্ভেজাল বিশ্বাস স্থাপন করা।
কিন্তু কেনো আল্লাহ্ তার পরেও মুমিনদেরকে আরো জোর দিয়ে মুসলিম হতে বললেন?
বিভিন্ন মুফাসসিরগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তার মধ্যে কিছু রেফারেন্স উল্লেখ সাপেক্ষে মর্মটা বোঝার চেষ্টা করা যাক।
যেমনকি মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে বলেন:
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ حَقَّ تُقٰتِہٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ ﴿۱۰۲﴾
"হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর(১) এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।(২)"
—সূরাঃ আলে-ইমরান (১০২)
(১) • আলোচ্য আয়াতে আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের হক্ক আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাকওয়ার ঐ স্তর অর্জন কর, যা তাকওয়ার হক। কিন্তু তাকওয়ার হক বা যথার্থ তাকওয়া কি? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, রবী, কাতাদাহ ও হাসান রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, তাকওয়ার হক হল, প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা- কখনো বিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা- অকৃতজ্ঞ না হওয়া।
-(ইবন কাসীর)
• ইসলামের যাবতীয় বিধান মেনে চলা, তার ওয়াজেব কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে পালন করা এবং যত নিষিদ্ধ বস্তু আছে, তার ধারে-কাছেও না যাওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, এই আয়াত নাযিল হলে সাহাবাগণ বড়ই বিচলিত হয়ে পড়েন। তাই মহান আল্লাহ [فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ] (তোমরা তোমাদের সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর।) আয়াত অবতীর্ণ করেন। তবে এই আয়াতকে উক্ত আয়াতের ‘নাসিখ’ (রহিতকারী) মনে না করে তার ব্যাখ্যাকারী মনে করাই বেশী সঠিক। কারণ, নাসখ তখনই মনে করতে হয়, যখন উভয় আয়াতের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধন সম্ভব না হয়। এখানে তো উভয় আয়াতের মধ্যে সমন্বয় ও সামঞ্জস্য সাধন করা সম্ভব। যেমন এইভাবে অর্থ করা,اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ مَاسْتَطَعْتُمْ ‘‘আল্লাহকে ঐভাবেই ভয় কর, যেভাবে স্বীয় সাধ্যমত তাঁকে ভয় করা উচিত।’’
-(ফাতহুল ক্বাদীর)
(২) • এতে বুঝা যায় যে, পূর্ণ ইসলামই প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ আনুগত্য করা এবং তার অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন। আয়াতের শেষে মুসলিম না হয়ে যেন কারও মৃত্যু না হয় সেটার উপর জোর দেয়া হয়েছে। দুনিয়াতে ঈমানদারের অবস্থান হবে আশা-নিরাশার মধ্যে। সে একদিকে আল্লাহর রহমতের কথা স্মরণ করে নাজাতের আশা করবে, অপরদিকে আল্লাহর শাস্তির কথা স্মরণ করে জাহান্নামে যাওয়ার ভয় করবে। কিন্তু মৃত্যুর সময় তাকে আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা নিয়েই মরতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ সম্পর্কে সু ধারণা না নিয়ে মারা না যায়।” [মুসলিম: ২৮৭৭] অর্থাৎ মৃত্যুর সময় তার আশা থাকবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন।
——আরেকটি রূপক উদাহরণ দেওয়া যাক, একই ক্লাসের এক ছাত্র ইসলাম পরীক্ষায় 40 পেলো, অন্যদিকে আরেকজন ছাত্র 90 পেলো। তারা ২ জনেই কিন্তু একই ক্লাসের স্টুডেন্ট কিন্তু তাদের স্টাডির উপর ডিপেন্ড করে মার্কস কম বেশি হয়ে গেলো। কিন্তু দুজনেই কিন্তু ছাত্র।
এখন 40 নম্বর পাওয়া ছাত্রের সাথে একজন নামধারী মুসলিম আর 90 নম্বর পাওয়া ছাত্রের সাথে একজন প্রকৃত মুসলিমের তুলনা করলেই আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। মুসলিম কিন্তু দুজনেই কিন্তু তাদের মধ্যে পার্থক্য কত বড়! একজন নামধারী তো আরেকজন প্রকৃত মুসলিম।
যেমনটি 40 নম্বর পাওয়া ছাত্র তার পরবর্তী ধাপসমূহে নম্বরের জন্যে ফেঁসে যাবে ঠিক একইভাবে আখিরাতের ময়দানে ফেঁসে যাবে সেই নামধারী মুসলিম।
(এখানে নম্বরের সাথে তুলনা করে ব্যাপারটা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তাই কেও এমন লজিক দেখাবেননা যে 40 পেলে কি হবে সে ভবিষ্যতে ভালো কিছুও করতে পারে!)
এখন আমাদের করণীয় কি? কালেমা পরে ঈমান এনে মুসলিম তো হলাম কিন্তু প্রকৃত মুসলিম হতে কেমন কাঠ খড় পুড়াতে হবে?
সহজ উত্তর, একজন প্রাকটিসিং মুসলিম/মুসলিমা হন। জীবনের সকল পর্যায়ে দ্বীনি জ্ঞান আহরণ ও সেই জ্ঞানের সাহায্যে আমল করতে থাকুন এবং হ্যাঁ শুরুটা এখন থেকেই করুন। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে, অনেক কিছু ছেড়ে দিতে হবে।
আল্লাহর খুশির জন্যে এতটুকু তো করতেই পারেন তাইনা?🌺
MaShaAllah
ReplyDeleteমা শা আল্লাহ
ReplyDelete